আমার ধারণা প্রায়োগিক পদার্থবিজ্ঞানিরা Kamerlingh Onnes এর মত বিজ্ঞানিকে খানিকটা ঈর্ষার চোখে দেখেন, যিনি তাপমাত্রার অবনমনকে পদার্থবিজ্ঞানের আলাদা একটা ক্ষেত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, যার প্রসার আপাত সীমাহীন। মানুষের নিম্ন থেকে নিম্নতর তাপমাত্রায় পৌঁছাতে পারে এবং যে সেটার সূত্র ধরতে পেরেছে তার পক্ষে আজকের বৈজ্ঞানিক জয়যাত্রার রোমাঞ্চকর সব অভিযানের একাধিপত্য অর্জন খুবই সম্ভব। আরেকজন বিজ্ঞানি Percy Bridgmen। তিনি অকল্পনীয় উচ্চচাপ তৈরি করতে সক্ষম এমন একটা উপায় বের করেছেন এবং এর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে আরেকটি খুব সম্ভবনাময় ক্ষেত্র। অন্যদিকে নিম্ন থেকে নিম্নতর চাপে পৌঁছানোর দৌঁড়েও মানুষ অনেকখানি এগিয়েছে।
আমি এমন একটা ফিল্ডের কথা বলব যেটা নিয়ে এখন অব্দি কাজ হয়েছে খুব কম, বিশাল একটা ক্ষেত্র পড়ে আছে এটা নিয়ে কাজ করে দেখার। তবে বলে রাখি, এই বিষয়টার ধরনই এমন যে, এটার কাজ মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানের ভুরি ভুরি প্রশ্নের উত্তর দেয়া নয়, বরং এর আসল সৌন্দর্য এর সম্ভাব্য সব টেকনিকাল অ্যাপ্লিকেশনে। এই বিষয়টা অনেকটা সলিড স্টেট ফিজিক্সের মত, যেটা কোন বিদঘুটে আচরণের আনকোরা নতুন কণিকার অস্তিত্ব আবিষ্কার বা অনুমান করে না ঠিকই, কিন্তু সমাধান করে জটিল পরিস্থিতিতে একজোট কণিকা কী রকম অদ্ভুত আচরণ দেখাতে পারে তার আদ্যপান্ত।
ভূমিকা আর দীর্ঘায়িত না করি। আসলে আমি আজকে এমন একটা কিছু নিয়ে কথা বলব যেটা দিয়ে হয়ত ক্ষুদ্রজগতের পরিসরে সবকিছু নিজেদের খেয়াল মত পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রন করা যেতে পারে।
ক্ষুদ্রজগতের কথা বলতে গেলে শুরুতেই উঠে আসে আমরা ইতোমধ্যে আমাদের আশেপাশের যেসব বস্তুকে ক্ষুদ্রতর রূপ দিতে শুরু করেছি সেগুলির কথা। আর তখনই আমার বন্ধুরা মনে করিয়ে দেবেন কড়ি আঙ্গুলের নখের সাইজের মিনিয়েচার মোটর, কিংবা আলপিনের মাথায় প্রার্থনা সঙ্গীত লেখার প্রচেষ্টার সফলতার কথা। তবে আজকে আমি যে স্কেলের জগত নিয়ে লিখব ভেবেছি, সেই পরিমাপে এগুলি কিছুই নয়। এই যে ক্ষুদ্রতার যে সীমা উল্লেখ করলাম তার তুলনায় অনেক ক্ষুদ্র একটা জগত পড়ে আছে। দু হাজার সালের পৃথিবীতে যেসব মানুষেরা বাস করবেন, তারা ভেবে আশ্চর্যই হবেন সৌন্দর্যপরিপূর্ণ ভীষন ক্ষুদ্র জগতটি নিয়ে মানুষের সত্যিকার কৌতুহল জন্মাতে ষাটের দশক পর্যন্ত বসে থাকতে হল কেন।
একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি, একটা আলপিনের মাথায় প্রার্থনা সঙ্গীত তো লেখা সম্ভব, কিন্তু ঐটুক জায়গায় একটা ২৪ ভল্যুমের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা কি ধরানো যাবে?
এবার একটু একটু করে উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করে দেখি। এজন্য আমাদের ভেবে দেখতে হবে এই বিষয়ের সাথে আর কী কী জিনিসের যোগসাজস আছে। প্রথমত, একটা আলপিনের মাথার ব্যাস মোটামুটি এক ইঞ্চির ষোল ভাগের একভাগ। এখন এই ব্যাসকে যদি অন্তত ২৫,০০০ গুণ করা যায় তাহলে যে ক্ষেত্রফল তৈরি হবে তা একটা স্ট্যান্ডার্ড এনসাইক্লোপিডিয়া সিরিজের সমস্ত পাতার ক্ষেত্রফলের সমান হবে। তারমানে দাঁড়াচ্ছে, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাতে লেখাগুলি যে আকারে আছে, পিনের মাথায় ধরাতে গেলে এখন লেখার সাইজ কমিয়ে পঁচিশ হাজার ভাগের একভাগে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে প্রশ্ন হল, সেটা কি সম্ভব? একজন সাধারণ মানুষ মোটামুটি সর্বনিন্ম এক ইঞ্চির ১২০ ভাগের একভাগ পর্যন্ত দৈর্ঘ্যকে দর্শনানুভব করতে পারে যেটা হাফটোন টেকনিকে লেখা এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার হরফ গঠনের ছোট্ট ডটগুলির ব্যাসের প্রায় সমান। এই ডটের সাইজ ২৫০০০ ভাগের একভাগে কমিয়ে আনলে তা দাঁড়ায় মোটামুটি আশি অ্যাংস্ট্রম, যা একটা গড়পড়তা ধাতুর ৩২ টা অণুর ব্যাসের সমান। এই পরিমাণের ব্যাসের জন্য যে ক্ষেত্রফল তৈরি হয় তাতে এক হাজারটা অণু ঠিকঠাক এঁটে যায়। তার মানে ডটের সাইজ প্রয়োজনমাফিক কমিয়ে আনতে পারলে একটা পুরো এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাকে পিনের আগায় ধরানো যাবেই, সংশয় নেই।
এই অতি ক্ষুদ্র আকারে লেখা চাইলে কি পড়াও যাবে? ধরে নেই আমরা পিনের মাথায় ধাতু খচিত করে লিখেছি আমাদের এনসাইক্লোপিডিয়া, অর্থাৎ মূল বইয়ের যেখানে কালো অক্ষর আছে সেখানে বসিয়েছি মেটালের অক্ষর, তবে এবারের সাইজ আসল সাইজের ২৫,০০০ ভাগের এক ভাগ। তাহলে এত ক্ষুদ্র অক্ষর পড়ার উপায় কী?
উত্তর সহজই। বলতে গেলে একটা খুব কমন টেকনিকেই পড়ে ফেলা যাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র এই জিনিসটা। (যদিও সত্যি সত্যি যখন মানুষ এরকম ক্ষুদ্র জায়গায় এতটা তথ্য ধরিয়ে ফেলতে সক্ষম হবে, তখন তথ্য উদ্ধার করার জন্য তারা নিশ্চয় এরচেয়েও ভাল কোন উপায় আবিষ্কার করে ফেলবেন)। যাহোক আমাদের যেটা করতে হবে- ধাতব অক্ষরগুলোর উপর নরম প্লাস্টিকের লেয়ার ফেলে অক্ষরের একটা (ফিমেল) মোল্ড তৈরি করে নিতে হবে প্লাস্টিকের গায়ে। এখন সিলিকা বাষ্পায়িত করে প্লাস্টিকের ছাঁচের উপর খুব সাবধানে একটা লেয়ার জমা করতে হবে সিলিকার। এরপর গোল্ড বাষ্পায়িত করে কোন বিশেষ কোণে তা সিলিকার লেয়ারের উপর জমা করতে হবে যেন অক্ষরগুলো পরিষ্কার ভেসে ওঠে। শেষে প্লাস্টিক দ্রবীভুত করে সিলিকা ফিল্মের থেকে আলাদা করে ফেলে দিতে হবে। এখন গোল্ডের আস্তরণসহ সিলিকা ফিল্ম ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নিচে ধরলেই ভেসে উঠবে আমাদের কাঙ্খিত লেখাজোকা।
তার মানে পিনের আগায় যদি একবার পুরো এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা লিখতে পারা যায়, তবে সেটা পড়তে গিয়ে খুব বেগ পেতে হবে না। আর চাইলে খুব সহজে লেখা একাধিক কপিও করা যাবে- নতুন একটুকরা প্লাস্টিক লেখার গায়ে চেপে ধর, একইভাবে এগোও, ব্যাস পেয়ে গেলে লেখার নতুন একটা কপি!
লেখার উপায়
তো আমাদের সামনে এই পর্যায়ে যে প্রশ্নটা এসে দাঁড়ায়, আমরা এত ছোট করে লিখব কিভাবে? এই মুহূর্তে আমাদের জন্য কোন স্ট্যান্ডার্ড টেকনিক নেই। তবে আমি বলছি, বিষয়টাকে যতটা কঠিন শোনাচ্ছে, বাস্তবে এটা এত কঠিন হবে না। আমরা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের লেন্স আগপিছ করে এটা দিয়ে ছোট জিনিস বড় করে বা বড় জিনিস ছোট করে- দু রকমই দেখতে পারি। এখন লেন্সের যে সন্নিবেশে বড় জিনিস আরও ছোট করে দেখায়, সেই সন্নিবেশে আলোকে খুব ছোট্ট বিন্দুতে ফোকাস করা যায়। আমরা আলো বিন্দুভূত করার এই টেকনিককে কাজে লাগিয়ে ক্যাথোড রে অসিলোস্কোপের মত লাইন ধরে ধরে অক্ষর তৈরির জন্য পিনের মাথায় যেখানে যতটুকু ম্যাটেরিয়াল প্রয়োজন ততটুকু জমাতে পারি।
তবে স্পেস-চার্জ সীমাবদ্ধতার জন্য এই পদ্ধতি ভীষনই ধীরগতির হবে। তাই দরকার আরও গতিশীল কোন উপায়। সেটা হতে পারে এরকম- শুরুতে আমরা আমাদের সাইজমত অক্ষরের শেপে ছিদ্র কাটা একটা পর্দা তৈরি করলাম (মুলত কোন আলোক প্রক্রিয়ায়)। এখন পর্দার পেছনে ইলেকট্রিক আর্ক ধরে ছিদ্রগুলির ভেতর দিয়ে ধাতুর আয়ন টেনে এনে আগের মত লেন্স দিয়ে অক্ষরের আয়নিক ইমেজ তৈরি করলে তাতে ধাতু জমে আমরা যা চাই তা তৈরি করে দেবে।
আরেকটা সহজ উপায় হতে পারে এরকম(আমি নিশ্চিত নই যে এটা কাজ করবে)- সাধারণ আলোক মাইক্রোস্কোপের লেন্স বিন্যাসকে উল্টিয়ে নিয়ে আলো এর মধ্যে দিয়ে কোন ফটোইলেকট্রিক তলে অক্ষরের শেপ অনুযারী বিন্দুভুত করলে যেসব যায়গায় আলো পড়বে ঠিক ঐসব জায়গা থেকে ইলেকট্রন মুক্ত হবে, (ফলে ইলেকট্রনগুলো সম্মিলিতভাবে অক্ষরের শেপ ধরে রাখবে)। এখন ইলেকট্রন গুলোকে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে ধাতব তলের কোন ক্ষুদ্র স্পটে আমাদের প্রয়োজনমত সাইজে ফোকাস করলে ইলেকট্রন ধাতুর ঐসব অংশে (উদঘাটনযোগ্য) পরিবর্তন তৈরি করবে। এই প্রক্রিয়া দীর্ঘক্ষণ ধরে চালালে ধাতব সারফেস ক্ষয়ে যাবে? আমার জানা নেই। তবে এটা যদি আসলেই ধাতব তলে কাজ না করে তবে নিশ্চয়ই এরকম কোন পদার্থের সারফেস খুঁজে পাওয়া যাবে যেখানে ইলেকট্রন বীম ফোকাস করলে তা ঐ সারফেসে উদ্ধারযোগ্য ছাপ তৈরি করবে। এখন সেই পদার্থ পিনে আলপিনের মাথায় কোটিং করিয়ে নিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে।
ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে বিবর্ধনের সময় অল্পকিছু ইলেকট্রনকে স্ক্রিনের বড় একটা যায়গায় ছড়িয়ে দেয়া হয়, ফলে ঘনত্ব তথা তীব্রতা যায় কমে, যেটা একটা সমস্যা। তবে আমাদের কিন্তু এ সমস্যায় পড়তে হবে না। কারণ আমাদের প্রক্রিয়াটা উল্টো- প্রথমত আলোকরশ্মি যেখানে ফোকাস করা হবে সে জায়গটা ক্ষুদ্র, ফলে তীব্রতা থাকবে বেশি। সেখানে প্রচুর ইলেকট্রন মুক্ত হবে। আবার ঐসব ইলেকট্রনকে আমর খুব ছোট্ট জায়গায় ফোকাস করব ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে। আমি বুঝতেই পারছি না মানুষ এটা কেন এখনও বানায় নি।
এ তো গেল পিনের মাথায় এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ধরানোর বুদ্ধি। এবার চিন্তা করি তো পৃথিবীতে যত বই আছে সব যদি ধরাতে চাই? লাইব্রেরি অফ কংগ্রেসে বই আছে ৯ মিলিয়ন, ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিতে আছে ৫ মিলিয়ন, আরও ৫ মিলিয়ন বই আছে ফ্রান্সের ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে। অবশ্যই এসব বইয়ের ভেতর একাধিক কপি আছে। আমাদের সুবিধার জনন্য আমরা ধরে নেই মোটমাট ২৪ মিলিয়ন আলাদা আলাদা বই আছে পৃথিবীতে।
এবার ভেবে দেখি তো, আমরা যে স্কেলে প্রিন্ট করতে চাচ্ছি, সেই স্কেলে পৃথিবীর ২৪ মিলিয়ন বই নতুন করে প্রিন্ট করলে কতটা জায়গা লাগবে? অবশ্যই মোটামুটি ১ মিলিয়ন পিনহেড লাগবে। কারণ ঐ স্কেলে আমরা একটা পিনের মাথায় ২৪ ভল্যুমের এনসাইক্লোপিডিয়া লিখতে পারি। আর এখন আমাদের আছে ২৪ মিলিয়ন বই। মিলিয়ন পিনকে সাজিয়ে ১০০০x১০০০ এর স্কয়ার তৈরি করা যায়, যেটার ক্ষেত্রফল ৩ বর্গগজ মত। অর্থাৎ কাগজের মত পাতলা প্লাস্টিক্র উপর সিলিকার তৈরি অক্ষরের রেপ্লিকা যা দিয়ে আমরা আমাদের স্কেলে আসল লেখার কপি বানিয়েছি, পৃথিবীর সব বইয়ের জন্য সেটার সাইজ হবে এনসাইক্লোপিডিয়ার ৩৫ টা পৃষ্ঠার মত বা এই ম্যাগাজিনটার অর্ধেক। ভেবে দেখুন, মানুষের সঞ্চিত সব জ্ঞান, যা আজ অব্দি মানুষ বইয়ের পাতায় লিপিবদ্ধ করেছে- সব লেখা, সব ছবি কোন রকম রেজুলেশন না হারিয়েই ক্ষুদ্র একটার পুস্তিকার ভেতরে সংরক্ষণ করাটা খুবই সম্ভব।
আমি ভাবছি ক্যালটেকে আমাদের লাইব্রেরিয়ানকে যদি আমি বলি, তিনি যে লাইব্রেরির ১,২০,০০০ বইকে মেঝে থেকে ছাদ অব্দি তাকে তাকে সাজিয়ে রাখা, ড্রয়ার ড্রয়ার লাইব্রেরি কার্ড বা স্টোর রুম ভর্তি পুরোনো বই সামলাতে সারাদিন দৌড়ের উপর থাকেন, আজ থেকে দশ বছর পর এর সমস্ত কিছু একটা লাইব্রেরি কার্ডের ভেতরেই ভরে রাখা যাবে, তখন তার অভিব্যক্তি কেমন হবে! ধরা যাক, কোন কারণে ইউনিভার্সিটি অফ ব্রাজিলের সব বই আগুনে পুড়ে গেছে, আমরা কয়েক ঘন্টার মধ্যে মাস্টার প্লেট থেকে কপি করে আমাদের লাইব্রেরির সমস্ত বই পাঠিয়ে দিতে পারি একটা সাধারণ এয়ার মেইলের খামে ভরে।
আমি আজকের টকের শিরোনাম ঠিক করেছি There is plenty of room at the bottom, শুধু There is room at the bottom নয়। এখন পর্যন্ত যেটুক দেখিয়েছি সেটা আজকের দিনে বাস্তবিক ক্ষেত্রে কোন কিছুকে ছোট আকার দিতে আমরা যেরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি সেরকমই। এই পোর্শনটা কেবলই there is room। আর এখন দেখাতে যাচ্ছি there is plenty of room, তবে কীভাবে করব সেটা আর ব্যাখ্যা করব না, শুধু জানা পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুসারে যা সম্ভব, সেটা জানাব। এখানে আমি অ্যান্টি-গ্রাভিটি আবিষ্কার করতে যাচ্ছি না, যেটা সম্ভব হবে কেবলই যদি ভবিষ্যতে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলির রূপ আজকে আমরা যেমনটা ভাবি সেরকম না থাকে। ঠিক সেভাবেই, আমি এখন যা বলতে যাচ্ছি তার বাস্তব রূপ দেয়া সম্ভব হবে যদি পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলি আমরা যেমনটা জানি সেটাই সঠিক হয়। আমরা এখনও এসবের বাস্তব রূপ দিতে পারিনি তার কারন হল, আমরা এ দিকটা নিয়ে ভাবিনি।
তথ্যের সংক্ষেপন
বইয়ের পাতায় লেখা-ছবি যে অবস্থায় ছাপানো আছে সে অবস্থায় ছাপানোর পরিবর্তে ডট-ড্যাশ বা এরকম কোন সংকেতের সাহায্যে তথ্যের সারাংশটুকু সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যেমন, ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষরগুলির প্রত্যেকটিকে ছয় বা সাত বিট তথ্যের মাধ্যমে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা যায়। অর্থাৎ আমরা অক্ষরের সমস্ত বিন্দু অবস্থান অনুযায়ী বসানোর পরিবর্তে ছয় অথবা সাতটা ডট/ড্যাশ দিয়ে সেগুলো পুরোপুরি সংরক্ষণ করতে পারি। এর ফলে শুধু পিনের মাথার সারফেসের পরিবর্তে পুরো পিনের ভেতরেই তথ্যের সংরক্ষণ করা সম্ভবপর হবে।
আমরা একটা ধাতুর ছোট স্পট (বিন্দু) দিয়ে একটা ডট প্রকাশ করতে পারি, আর দ্বিতীয় কোন একটা ধাতুর স্পট ড্যাশ হিসাবে ব্যবহার করতে পারি, যেগুলি একটার পরে আরেকটা সাজিয়ে তথ্যের ক্রিস্টাল তৈরি করা যাবে। এখন এক একটা স্পটকে চিন্তা করা যেতে পারে ৫x৫x৫ অর্থাৎ ১২৫ টা পরমাণুর তৈরি কিউব হিসাবে। আমার মনে হয় ১২৫ টার জায়গায় আমাদের ন্যুনতম একশ বা তার সামান্য কিছু বেশি পরমাণুর দরকার হবেই এক একটা স্পটের জন্য, যাতে ইনফরমেশন ছড়িয়ে না যায় বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় না হারায়।
আমি ২৪ ভল্যুমের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় কতগুলো অক্ষর বিন্যস্ত আছে তার একটা মোটামুটি হিসাব কষেছি। এখন যদি ধরি বিশ্বের ২৪ মিলিয়ন বইয়ের প্রত্যেকটির গড় আকার এক ভল্যুম এনসাইক্লোপিডিয়ার সমান, তাহলে বিশ্বের সব বই মিলে মোট কতগুলি অক্ষর আছে তারও একটা হিসাব জানা হয়ে যাবে। সে হিসাবে সমস্ত বইয়ের মোট তথ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০১৫ বিটের মত। এখন এক বিট মানে একটা স্পট, যেটা তৈরির জন্য ১০০ টা মত পরমাণুর দরকার হয়, একটু আগেই বলেছি সে কথা। তাহলে ১০১৭ টা পরমাণু দিয়েই আমরা তাবৎকালের সঞ্চিত মানুষের সমস্ত জ্ঞান সংরক্ষণ করতে পারি, বাহ্যিক আকারে যেটার কোন ডাইমেশন এক ইঞ্চির দুশ ভাগের এক ভাগ থেকে বড় হবে না, এই আকার আমাদের চোখে এককণা বালুর চেয়ে কোন অংশে বড় নয়। তার মানে আসলেই There is Plenty of room at the bottom! (চলবে…)