একটা কথা স্পষ্ট করে বলে রাখি, শিরোনামে যাই লেখা হোক না কেন ডিপ্লোডোকাস মোটেও দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ডাইনোসর নয়।
আসলে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ডাইনোসর কি তা খুঁজে বের করা সম্ভবই নয় বলতে গেলে। কেন তা ব্যাখ্যা করি। আমাদের ডাইনোসর চেনার একমাত্র উপায় হচ্ছে ফসিল। সবসময়ই নতুন নতুন ফসিল পাওয়া যাচ্ছে আর নতুন নতুন ডাইনোসরের প্রজাতি পাওয়া যাচ্ছে। তাই এখন যেটাকে দেখে সবচেয়ে লম্বা সাইজের ডাইনোসর মনে হয়, দু’দিন পর দেখা যাবে তার থেকেও বড় একটা ফসিল পাওয়া গেল। এবং ডিপ্লোডোকাসের থেকে বড় আকারের ডাইনোসরের ফসিল ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ডিপ্লোডোকাসের থেকে বড় কোন ডাইনোসরেরই আজ পর্যন্ত পূর্ণ ফসিল পাওয়া যায়নি। সেই দিক থেকে এখনও ডিপ্লোডোকাসরা দুনিয়ার সবচেয়ে লম্বা ডাইনোসর যার মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য মানুষের হয়েছে।
তাহলে কত বড় ছিল ডিপ্লোডোকাসরা? আমরা আজকাল ধারনা করতে পারি এদের দৈর্ঘ্য ছিল নব্বই থেকে একশ–বিশ ফুটের মাঝামাঝি, কিছু ক্ষেত্রে আরও কম, আর ওরা দাড়ানোর জন্য যায়গা যা নিত তাতে একটা টেনিস কোর্ট দাড় করানো সম্ভব। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, আকারের তুলনায় ডিপ্লোডোকাসের ভর খুবই কম, মুটামুটি পনের টন থেকে ত্রিশ টনের মধ্যে। অর্থাৎ একটা খুব বড় ট্রাক থেকে দুটো বড়সড় হাতির সমান। সেই দিক থেকে তাদের এক প্রজাতি সিসমোসরাসরা ছিল ইনক্রেডিবল হাল্ক যাদের ভর ছিল প্রায় ১০০ টন!
ডিপ্লোডোকাসরা সরোপডদের অন্তর্গত এবং অবশ্যই তৃণভোজী। দুঃখজনক হলেও তাদের পেটপূজায় ভয়ানক ঝামেলা করতো লম্বা লেজখানা। ডিপ্লোডোকাসদের লেজটিই ছিল ৪৫ ফুটের মত লম্বা। লেজের কারনে তারা উঁচু এলাকার খাবার খেতে পারতো না সবসময় নিচের দিকে থাকা ঘাস–ফার্ন খেতে হতো। কিন্তু তৃণভোজী বলে ডিপ্লোডোকাসরা কি নিরীহ গোছের গোবেচারা ডাইনোসর? একটুও না।
লেজ নিয়ে যত সমস্যাই থাক, ডিপ্লোডোকাসদের লেজ কিন্তু ভয়াবহ জিনিস। চিন্তা করে দেখুন এদের নামকরণই হয়েছে ওদের লেজের হাড়ের আজিব গঠনের জন্য। এদের লেজে কশেরুকা ছিল ৮০ টি! আর দানবাকৃতি সরীসৃপগুলো এত লম্বা আর ভারী লেজটাকে চাবুকের মত নাড়াতে পারতো, আর সেই লেজ কারও উপর পড়লে তাকে আর দেখতে হবে না।
ধারনা করা হয় তারা সুপারসনিক গতিতে লেজ দিয়ে মাটিতে আঘাত করতে পারতো। যদি তাই হয় তবে সেই সংঘর্ষ থেকে কেমন শব্দ সৃষ্টি হতো একবার কল্পনা করুন পাঠক। বুক কাঁপিয়ে দেওয়া ওই শব্দ শুনার পর শিকারী ডাইনোসরদের যে ওদিকে যাওয়ার ইচ্ছা একরকম উধাও হয়ে যেত সেটা বলা যেতেই পারে।
ডিপ্লোডোকাসরা পৃথিবীতে চড়ে বেড়াত ১৫০ মিলিয়ন বছর আগে জুরাসিক আমলের শেষভাগে। আবাসস্থল ছিল উত্তর আমেরিকার পশ্চিমভাগ। টেলিভিশন–বইপত্রের কল্যাণে আজকাল যেসব ডাইনোসর আমাদের অতি পরিচিত তাদের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় সরোপড নিঃসন্দেহে ডিপ্লোডোকাসরা(কারন সম্ভবত আবার সেই লেজ, এত বড় লেজ দেখে একটা ডিপ্লোডোকাস চেনা খুব একটা অসম্ভব নয়)। এছাড়াও অসংখ্য ফসিল পাওয়া গেছে ওদের। আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে এইসব ফসিলের একটা বড় অংশ উপহার হিসেবে দিয়েছেন ধনকুবের স্টিল ব্যবসায়ী এন্ড্রু কার্নেগি।
ডিপ্লোডোকাসের প্রথম ফসিলটা পাওয়া গিয়েছিল ১৮৭৭ সালে ক্যানন সিটির কাছে রকি পর্বতমালায়। ক্যানন সিটি আমেরিকার কলোরাডোতে। ফসিলটি খুঁজে পেয়েছিলেন আর্ল ডগলাস এবং স্যামুয়েল ডব্লু. উইলিস্টন। পরের বছরই এই ডাইনোসরদের নাম ডিপ্লোডোকাস রাখেন ওথনিয়েল সি. মার্শ। এই ফাঁকে ডিপ্লোডোকাস এর মানেটা বলে রাখি। শব্দটা গ্রীক থেকে এসেছে, এর মানে হচ্ছে ’জোড়া কড়ি’ বা ‘Double Beam’ (এই কড়ি হচ্ছে কড়িকাঠের কড়ি, কড়ি দিয়ে কিনলামের কড়ি না)।
ডিপ্লোডোকাসের সবচেয়ে সুন্দর ফসিলটা পাওয়া গিয়েছিল ১৮৯৯ সালে উত্তর আমেরিকার শিপ ক্রিক মানে ভেড়ার খাঁড়িতে। তার এক অভিযানে ফসিলটি খুঁজে পেয়েছিলেন এন্ড্রু কার্নেগি। এই ফসিলটি পরে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডকে (উপহার হিসেবে বড় সাইজের হাড়গোড় মনে হয় একটু বেশিই হয়ে যায়, কিন্তু কি আর করা)।
এটা আশা করি বলার দরকার নেই যে এতবড় একটা ডাইনোসরের ডিম যে বড়সড় একটা ফুটবলের সমান ছিল। তাদের দেহের তুলনায় ডিপ্লোডোকাসদের মগজ ছিল মাত্র কেবল আমাদের হাতের মুঠির সমান। এই কারণেই কি না বাপ–মা হিসেবে ডিপ্লোডোকাসরা খুবই নিম্নমানের। একবার ডিম দেওয়ার পর বাচ্চা ডিপ্লোডোকাসরা মরল না বাঁচল এই ব্যাপারে তাদের কোন খেয়াল ছিল না।
তথ্যসূত্র :
[1] http://www.enchantedlearning.com/subjects/dinosaurs/facts/Diplodocus/
[2] http://www.livescience.com/24326-diplodocus.html
[3] https://www.walkingwithdinosaurs.com/dinosaurs/detail/diplodocus/
[4] http://dinosaurs.about.com
[5] http://www.wikipedia.org