অ্যাম্ফিসিলিয়াস ডাইনোসরদের একটা প্রজাতি হচ্ছে ফ্রাগিলিমাস। খুব সহজেই একে ডাইনোসরদের ডাইনোসর বলে চালিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে একে আমরা হারিয়ে ফেলেছি।
হ্যাঁ, আমরা একটা ডাইনোসরকে হারিয়ে ফেলেছি। ডাইনোসরের মত এত বড় একটা প্রাণী কেমন করে হারিয়ে যায় সেই প্রশ্ন তুলে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে কিন্তু ফ্রাগিলিমাসকে সত্যিই আমরা হারিয়ে ফেলেছি। ডাইনোসরের বর্ণনা রেখে এখানে বরং সেই গল্পটাই বলা যাক। তবে গল্পটা শুরু করার আগে একটা কথা বলে রাখা যাক। ফ্রাগিলিমাস এক কিংবদন্তী। এর অস্তিত্ব সত্যিই ছিল কি ছিল না তার সুস্পষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। এবং এই প্রমাণ না থাকার কারনেই হয়তো যতটা জনপ্রিয় হওয়ার কথা ছিল ততটা হতে পারেনি এই প্রজাতি।
হাড্ডি যুদ্ধ
এই কাহিনীর শুরু দুই বিখ্যাত প্যালেন্টোলজিস্ট(ডাইনোসর বিশেষজ্ঞ) ওথনিয়েল চার্লস মার্শ এবং এডওয়ার্ড ড্রিঙ্কার কোপ এর দ্বন্দ্ব থেকে। মার্শ এবং কোপ এর মাঝে একটা মজার প্রতিযোগীতা চলছিল; কে ডাইনোসরের সবচেয়ে অদ্ভূত কোন নতুন প্রজাতি খুঁকে বের করতে পারেন। সে সময়কার প্যালেন্টোলজিস্টরা তাদের এই সংঘর্ষের একটা নামও দিয়ে দেন, বোন ওয়র্স কিংবা আমরা বলতে পারি হাড্ডি যুদ্ধ।
মার্শকে কুপোকাত করার জন্য কোপ একজন ফসিল সংগ্রাহককে নিযুক্ত করে ফেললেন। ওই ফসিল সংগ্রাহকের নাম ছিল ওরামেল লুকাস।
খুঁজতে খুঁজতে ১৮৭৭ সালে কলোরাডোর গার্ডেন সিটির উত্তরের গার্ডেন পার্কে লুকাস একটা সরোপড ডাইনোসরের আংশিক কঙ্কাল(দুটো কশেরুকা, শ্রোণীচক্র এবং একটা ফিমার) খুঁজে পান। এবং এই কঙ্কাল যে ডাইনোসরটির ছিল তার নাম দেওয়া হয় অ্যাম্ফিসিলিয়াস ফ্রাগিলিমাস।
তবে ফ্রাগিলিমাসকে নিয়ে এত মাতামাতি কেন? এর আগ পর্যন্ত মানুষের জানা সবচেয়ে বড় ডাইনোসর ছিল
ডিপ্লোডোকাস(যদিও ডিপ্লোডোকাসের প্রথম ফসিলটি খুব বেশিদিন আগে খুঁজে পাওয়া যায় নি)। পাশের ছবিতে
ডিপ্লোডোকাসের একটি কশেরুকার সাথে ফ্রাগিলিমাসের একটি কশেরুকার পার্থক্য দেখানো হলো। কি মনে হচ্ছে?
ফ্রাগিলিমাসের আকার নিয়ে একটু কথা বলা যাক তবে। আমাদের অতি পরিচিত একটি ডাইনোসর হচ্ছে টি-রেক্স। টি-রেক্সের সাথে যদি আমরা ফ্রাগিলিমাসের আকারের তুলনা করি তবে বলতে হয় টি-রেক্স ছিল ফ্রাগিলিমাসের পোষা কুকুর।
যে ফিমারটি পাওয়া গিয়েছিল সেটার আকার ছিল প্রায় বার ফুট(অনেকে বলেন কোপের মাপতে ভূল হয়েছিল কিন্তু এই বক্তব্য তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি)। সে থেকে হিসেব করা বলা যেতে পারে যে ফ্রাগিলিমাস দৈর্ঘ্যে প্রায় ২০০ ফুটের মত লম্বা ছিল, যেখানে একটা ডিপ্লোডোকাসের গড় দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ১২০ ফুটের মতন।
কোপ তার এই নতুন আবিষ্কার ১৮৭৮ সালে আমেরিকান ন্যাচারালিস্টে প্রকাশ করেন। ডাইনোসরটির জন্য একটি নতুন গণ উল্লেখ করা হয় – অ্যাম্ফিসিলিয়াস এবং প্রজাতির নাম দেওয়া হয় ফ্রাগিলিমাস।
কোপ আমেরিকা মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির দিকে জাহাজে করে ফ্রাগিলিমাসের হাড়টি পাঠিয়ে দেন শেষপর্যন্ত। কিন্তু এই দানব সরীসৃপকে দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করার সুযোগ মিউজিয়ামে কর্তৃপক্ষ কখনই পাননি কারন হাড়টি এসে পৌছুতেই পারেনি। তাই ডাইনোসরদের ডাইনোসরদের অস্তিত্বের একমাত্র যে প্রমাণ আমাদের কাছে আজ আছে তা হলো কোপের করা কিছু স্কেচ।
ফ্রাগিলিমাসের আংশিক অবশেষটির কি হলো তা আজও নিশ্চিত নয়। এমন হতে পারে হাড়টি আসার পথে হারিয়ে গিয়েছে কিংবা অব্যবস্থাপনার কারনে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এমন হওয়াটা একেবারে অসম্ভব নয় কারন কোপের কথা অনুসারে ফ্রাগিলিমাসের হাড় ছিল খুবই নরম। Fragillimus নামটিও এসেছে Fragile থেকে।
এই হলো ডাইনোসরদের হারিয়ে যাওয়া ডাইনোসর অ্যাম্ফিসিলিয়াস ফ্রাগিলিমাসের কাহিনী। কোপ আর মার্শের হাড্ডি যুদ্ধের কারনে অনেকে অবশ্য বলে থাকেন ফ্রাগিলিমাসের পুরো অস্তিত্বই কোপের বানানো। কিন্তু সেই অভিযোগও ধোপে টেকেনি যার জন্য ধন্যবাদ জানাতে হয় কোপের শত্রু ও. সি. মার্শকেই।
কোপের কাজের উপর নজরদারি করার জন্য মার্শ কিছু গুপ্তচর নিয়োগ করেছিলেন। সেই গুপ্তচররা সম্ভবত মার্শকে কোন সন্দেহজনক খবর দেয়নি। কারন মার্শ আর কোপ সুযোগ পেলেই একজন আরেকজনের বংশ উদ্ধার করে ফেলতেন। সুতরাং এত বড় মিথ্যা যদি কোপ সত্যি বানাতেন মার্শ নিশ্চয়ই সেই সুযোগ ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন? কিন্তু আবিষ্কার প্রকাশ হওয়ার পর মার্শ কোপকে নিয়ে কোন অভিযোগ করেননি তাই মুটামুটি নিশ্চিত থাকা যায় যে কোপ কিছুই বানিয়ে বলেননি।
তথ্যসূত্র :
[2] http://carnivoraforum.com/topic/9329460/1/