জীববিজ্ঞান

রঙিলা ডাইনোসর: Sinosauropteryx

সাইনোসরোপটেরিক্স

: রঙিলা ডাইনোসর? ফাজলেমি নাকি রে ভাই?
: কেন সমস্যাটা কি হলো?
: ডাইনোসর আবার রঙিলা হয় কেমন করে? এটা কি এস.ডি. বর্মণের গান পেয়েছেন? রঙিলা রঙিলা রঙিলা রে…………..
: ডাইনোসর কি রঙিলা হতে পারে না?
: না। তার উপর এই ডাইনোসরের নামটা উচ্চারণ করতে গেলে দাঁত ভেঙে যাবে। সাই-নো-স-রোপ-টে-রিক্স। মানে কি এর?
: সাইনোসরোপটেরিক্স মানে হচ্ছে চিনের পালকঅলা ডাইনোসর। কিন্তু সেটা বড় কথা না, আপনি ডাইনোসরের রঙ নিয়ে যেন কি বলছিলেন?
: বলছিলাম যে ডাইনোসর রঙিলা হতে পারে না। বিচ্ছিরি দেখতে প্রাণী, ওগুলোর গায়ের রঙ হবে কালো নাহলে শ্যাওলা সবুজ, রঙিলা কখনোই হতে পারে না।
: হতে পারে আসলে। সাইনোসরোপটেরিক্সদের গায়ের রঙ কিন্তু রঙিন হতো। প্যালেন্টোলজিস্টরা বলেন কমলা আর সাদা রিং থাকতো এদের লেজে?
: প্যালেন্টোলজিস্টরা কি মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে তুলা ডাইনোসরের পাসপোর্ট সাইজ ছবি পেয়েছে নাকি যে বলে ফেলবে রঙিন না সাদাকালো?
: ব্যাপারটা ল্যাবে পরীক্ষা করে বের করা হয়েছে। বিশ্বাস না হলে এই ছবিটা দেখেন?

সাইনোসরোপটেরিক্স

উৎস: http://www.csotonyi.com/

: হু, দেখতে তো রঙিনই লাগে। কিন্তু কাহিনী হলো এটা তো মানুষের তৈরী করা, নাকি? ভুয়াও হতে পারে……….ইয়ে, একটু আগে ল্যাবে পরীক্ষা করার কথা কি যেন বলছিলেন না আপনি?
: হ্যা বলছিলাম তো।
: ওই ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলেন।
: আচ্ছা দাড়ান একটু চিন্তা করতে দেন……….আপনি কি মেলানিনের নাম শুনেছেন?
: মেলানিন? নাম শুনেছি মনে হয়। কি জানি করে এইটা দিয়ে?
: মেলানিন হচ্ছে একরকম জৈব পলিমার। নানান প্রাণীর চামড়া, চুল আর পালকে মেলানিন পাওয়া যায়। একেক মানুষের চামড়ার রঙ যে একেকরকম তার জন্য মেলালিন দায়ী।
: তা এর সাথে ডাইনোসরের কি সম্পর্ক?
: সম্পর্ক আছে। মেলালিন তিন ধরনের হয়, বুঝলেন? ইউমেলানিন, ফিওমেলানিন, নিউরোমেলানিন। এদের মাঝে লাল রঙের জন্য দায়ী হচ্ছে ফিওমেলানিন।
: তারপর?
: সাইনোসরোপটেরিক্স এর ফসিল পরীক্ষা করে তাতে ফিওমেলানিন থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এ থেকে বিজ্ঞানীরা বলেন যে এদের শরীরের পালকগুলো রঙিন ছিল। আরও সত্যি বলতে গেলে কমলা আর সাদা ছোপে ভরা।
: বুঝলাম…………এক মিনিট এক মিনিট, পালক?
: হ্যা, পালক। কোন সমস্যা?
: অবশ্যই সমস্যা! এটা ডাইনোসর, হাস-মুরগী না। ডাইনোসরের গায়ে পালক আসলো কোথা থেকে, অ্যা? আমার আগেই ধারনা হচ্ছিল আপনি এতক্ষণ ভাওতাবাজি করে গেছেন আমার সাথে।
: আমি মোটেও আপনার সাথে ভাওতাবাজি করি নাই। আপনি নিশ্চয়ই এই থিওরিটা জানেন যে বর্তমান যুগের পাখিরা ডাইনোসরদের বংশধর। তাহলে ডাইনোসরদের শরীরে পালক ছিল এটা এতটা অবাক হওয়ার কি হলো?
: তারমানে আপনি বলতে চান সাইনাসরা….কি যেন নামটা?
: সাইনোসরোপটেরিক্স।
: হ্যা ওইটাই………আপনি বলতে চান ওটার শরীরে পালক ছিল আর ওটা গাঙচিলের মত আকাশে উড়ে বেড়াত?
: না ওটা উড়তে পারতো না।
: তাহলে বললেন যে পালক ছিল?
: তা ছিল, কিন্তু পালক থাকলেই যে উড়তে হবে এমন তো কোন কথা নাই। উটপাখি উড়তে পারে?………তবে ব্যাপারটা কিন্তু বেশ মজার। চিন্তা করুন, বিবর্তন প্রাণীদেহে পালকের আবির্ভাব ঘটাল শরীর গরম রাখার জন্য। সেই পালক বিবর্তিত হয়ে এত বড় আর শক্তিশালী হয়ে গেল যে পাখিরা এখন পাখা দিয়ে উড়ে।
: হ্যা ওইভাবে দেখলে বিষয়টা খারাপ না। তারমানে সত্যি সত্যি পালক ছিল?
: জি ভাই, ছিল। এবং শুধু সাইনোসরোপটেরিক্স নয়, অন্য কিছু ডাইেনোসরের শরীরেও পালক পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তবে, মানুষের পাওয়া প্রথম পালকওয়ালা ডাইনোসর ছিল সাইনোসরোপটেরিক্স। যখন পাওয়া গিয়েছিল তখন তো ভাই তুলকালাম পড়ে গিয়েছিল চারদিকে। এর আগে আর কোন ডাইনোসরের ফসিলে পালক থাকার এতটা স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বুঝতেই পারছেন বিজ্ঞানের জন্য কত বড় আবিষ্কার? তার উপর কয়েকদিন আগে রঙ থাকার ব্যাপারটা প্রমাণিত হলো।

সাইনোসরোপটেরিক্সের ফসিল

সাইনোসরোপটেরিক্সের ফসিল

: কোথায় পাওয়া গিয়েছিল ফসিলখানা?
: চীনের উত্তরপূর্বে, লিয়াওনিং প্রদেশের দিকে। মনে নাই প্রথমে কি বলেছিলাম? চীনের পালকঅলা ডাইনোসর?
: আরে হ্যা তাইতো, তখন লক্ষ্য করি নাই রে ভাই………খুব বেশি আগে পাওয়া গিয়েছিল নাকি?
: ততটা আগে না। ২০০১ সালে।
: ও আচ্ছা………………তা সাইনো……..কি যেন?
: সাইনোসরোপটেরিক্স।
: হ্যা হ্যা ওইটাই। তা দেখতে তো ভালই, মাংশাসী পাবলিক নাকি?
: হ্যা, শিকারী ডাইনোসর?
: বাব্বাহ! কতটা বড় ছিল?
: ততটা বড় না। ৪ ফুট লম্বা, মুটামুটি একটা টার্কি মুরগীর সাইজের।
: তাও কম কি, চিন্তা করেন একবার এত বড় বড় দাঁতওলা টার্কি মুরগী আপনাকে কামড়াতে আসছে, সাথে রঙিলা রঙিলা লেজ…………ওফফ, কি ভয়ানক!

মানুষের সাথে সাইনোসরোপটেরিক্সের তুলনা

মানুষের সাথে সাইনোসরোপটেরিক্সের তুলনা

: হে হে হে……..
: তা এখন একটু কাজ করুন, আমাকে ডাইনোসরের নামটা উচ্চারণ করতে শেখান। কি যেন ছিল….সাইনাসিরাপ…….
: সাইনোসরোপটেরিক্স।
: সাইনোসরিপটো………
: সাইনোসরোপটেরিক্স।
: সাইনোসরেপটেরে……..

(আমরা ধরে নিতে পারি প্রাসঙ্গিক আলাপের এখানেই সমাপ্তি)।

এই লেখাটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ১৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:৩৭ এ, পুরনো বিজ্ঞান স্কুল ব্লগে।

About the author

মৃন্ময় আকাশ

আপাতদৃষ্টিতে অযৌক্তিক পৃথিবীর যুক্তি অন্বেষনে।

Leave a Comment